ঢাকা,বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

চকরিয়ায় বালুর ইজারা নিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়ার খুঁটাখালী খাল থেকে বালু তুলতে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইজারা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যন্ত্র দিয়ে বালু তোলার পাশাপাশি খাল তীরের সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। ইজারার শর্ত ভেঙে পরিবেশ ধ্বংসের কার্যক্রম চালালেও প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, খুঁটাখালী বাজার থেকে পূর্বদিকে তিন কিলোমিটার ঢুকে হরইখোলা কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশে দুই স্থানে খাল থেকে বালু তুলে তীরে জমা করা হচ্ছে। ২০ ফুট প্রস্থের এ খালে পর্যাপ্ত বালু নেই। এ কারণে খালের তীরে সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি ১৪৩২ বাংলা সনের জন্য ৩৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা নিয়ে খুঁটাখালী খালটি ইজারা নিয়েছেন হামিদুল হক নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এ বালু আমরা তুলছি না; পাহাড়ও আমরা কাটছি না। কে করছে, তাও জানি না।’

জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের ৫ উপজেলায় ২৭টি বালুমহাল সম্প্রতি ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯টি মহাল বনের মধ্যে এবং পাশে উল্লেখ করে ইজারা কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় বন বিভাগ। বন বিভাগের এসব আপত্তি আমলে না নিয়ে ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসন। আপত্তি জানানো বালুমহালের মধ্যে রয়েছে– খুঁটাখালী-১, ধলীরছড়া, পানিরছড়া, বালুখালী-১, দোছড়ি, পালংখালী, হিজলিয়া, ধোয়াংগারচর ও কুমারিয়ারছড়া।
জেলা প্রশাসককে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ইজারা দেওয়া ৯টি মহাল বনের ভেতর ও পাশে হওয়ায় বনভূমির মাটি, বালু, বন, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য তথা সামগ্রিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন ও দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বালুমহাল নাম দিয়ে ইজারা নিলেও বেশ কিছু স্থানে পর্যাপ্ত বালু নেই। বনের ভেতর ও পাশে বালুমহাল ইজারা নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈধতার আড়ালে বন ও পাহাড় ধ্বংস করা। তাই ঝুঁকিপূর্ণ মহাল ইজারা না দিতে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সে অনুরোধ আমলে নেয়নি জেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বালুমহালগুলো ইজারা দেওয়ার পর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত তদারক করে থাকে। এর পরও কেউ ইজারার শর্ত ভাঙলে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, পর্যাপ্ত বালু না থাকার পরও মহালের নাম দিয়ে ইজারা নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য বনের পাহাড় কাটা। তাই বনের ভেতর ও পাশের মহাল ইজারা দেওয়ার আগে বালু আছে কিনা, যাচাই করতে হবে। তা না হলে বন ধ্বংস হয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হবে।
এর আগে ২০২২ সালে চকরিয়ার পাঁচটি বালুমহালের ইজারা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কৃষিজমি, জলাধার ও টিলা কেটে বালু উত্তোলন বন্ধে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

পাঠকের মতামত: